ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় কৃষি উপকরণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম-দূর্ণীতি

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া ::
কক্সবাজার জেলায় পেকুয়া উপজেলায় জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার উদ্যোগে আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে জরুরী কৃষি উপকরণ বিতরনে ব্যাপক অনিয়ম, দূর্নীতি, দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি ও বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। নিয়মনীতি না মেনে যেনতেনভাবে মনগড়া তালিকা অনুসারে জাতিসংঘের ওই সংস্থার কর্মীরা কৃষি উপকরণ বিতরণ করায় বঞ্চিত হয়েছে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক পরিবার। এসব অনিয়ম যাচাই-বাছাই ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবী তুলেছেন সচেতন কৃষক সামজ।

গতকাল ২৬ডিসেম্বর মঙ্গলবার পেকুয়া উপজেলা কৃষি অফিস চত্বরে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এএফও) এর আয়োজনে ‘ইমারজেন্সি সাপোর্ট টু ফ্লাস ফ্লড এফেক্টেড এইচএইচএস ইন চট্টগ্রাম’ প্রকল্পের সহযোগিতায় উপজেলার বারবাকিয়া ও পেকুয়া সদর ইউনিয়নের ১২৫০ পরিবারের মাঝে কৃষি উপকরণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়।

আগামী ১ জানুয়ারী পর্যন্ত দুই ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে উপকরণ বিতরণ কার্যক্রম চলবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ২০ কেজি সার, ৫ কেজি বীজধান, ড্রাম এটি, কোদাল ১টি, পানির ঝর্ণা ১টি ও যাতায়াত ভাতা একশত টাকা করে বিতরণ করা হয়েছে।

তবে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার নিয়োজিত মাঠকর্মী মিল্টন সুশীল ও মীরা রুদ্র পেকুয়া সদর ও বারবাকিয়া ইউনিয়নের মাঠ পর্যায়ে সরেজমিন তালিকা তৈরী না করে পেকুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকার্তার কার্যালয় থেকে মনগড়া তালিকা অনুযায়ী অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে সাম্প্রতিক বন্যায় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থদের উপকারভোগীর তালিকায় অন্তর্ভূক্ত না করে কৃষি উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও সাম্প্রতিক বন্যায় উপজেলার শিলখালী ও টইটং ইউনিয়নে বিপুল পরিমাণ কৃষি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হলেও উপকরণ বিতরণের তালিকায় অদৃশ্য কারণে কারণে ক্ষতিগ্রস্থ ওই দুইটি ইউনিয়নের নাম তালিকায় রাখা হয়নি। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিলখারী ও টইটং ইউনিয়নের প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা।

বারবাকিয়া ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক মাহমুদুল করিম বলেছেন, সাম্প্রতিক আকস্মিক বন্যার কারণে বারবাকিয়া ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত প্রকৃত কৃষকদের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত না করে মনগড়া তালিকা অনুসারে কৃষি উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। যার ফলে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবার তাদের ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে। যা খুবই অন্যায় হয়েছে। এ ধরনের অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাই।

স্থানীয়দের কাছ থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, পেকুয়া সদর ও বারবাকিয়া ইউনিয়নের প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক পরিবারের নামের তালিকা তৈরিতে অনিয়ম হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ এবং প্রকৃত কৃষকরা উপকরণ পায়নি। স্থানীয় সংসদ সদস্য, পেকুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের নিয়ে সমন্বয় করে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক পরিবারের তালিকা তৈরী না করায় উপকরণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের আশ্রয় নিয়েয়ে জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মাঠকর্মীরা।

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক পেকুয়া উপজেলায় আকস্মিক বন্যায় প্রায় ১২ হাজারের অধিক কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
কৃষি উপকরণ বিতরণের সাথে নিয়োজিত জাতিসংঘের ওই সংস্থার মাঠ কর্মী মীরা রুদ্র এর কাছে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বারবাকিয়া ও পেকুয়া সদর ইউনিয়য়নে তারা মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন করে তালিকা তৈরী করেছেন। এছাড়া পেকুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকার্তার দেওয়া তালিকামতে তারা উপকারভোগী তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেছেন। তাই এখানে অনিয়ম হওয়ার কোন সুযোগ নাই। তবে পেকুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তপন কুমার রায় জানিয়েছেন, ওই সংস্থাটি তার কাছ থেকে কোন ধরনের তালিকা নেয়নি।

পেকুয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের এক ইউপি সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাম্প্রতিক বন্যায় পেকুয়া সদর ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ড়ের হাজার হাজার কৃষক পরিবার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কিন্তু তালিকা তৈরীতে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্ণীতির কারণে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থরা কৃষি উপকরণ পাইনি।

পেকুয়া সদর ইউনিয়নের শেখেরকিল্লা ঘোনা গ্রামের কৃষক জয়নাল আবেদীন ও আবদু রহিম জানান, আমরা প্রকৃত কৃষক এবং সাম্প্রতিক বন্যায় আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হলেও জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার কর্মীরা মাঠ পর্যায়ে এসে উপকারভোগীর তালিকায় আমাদের নাম অন্তর্ভূক্ত করেনি। যারা কৃষক পরিবার নয় তাদেরকে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কৃষি উপকরণ বিতরণের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এটি আমাদের মতো অসংখ্য কৃষকের সাথে বেষম্য করা হয়েছে।

পেকুয়া উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম সাহেদ বলেন, পেকুয়ায় কৃষকদের জন্য বরাদ্ধকৃত কৃষি উপকরণসহ কোটি কোটি টাকার সহায়তায় বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম, দূর্নীতি হচ্ছে। তিনি এসব অনিয়ম বন্ধের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

অনিয়ম প্রসঙ্গে পেকুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তপন কুমার রায় এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার লোকজন নিজের সরেজমিনে যাচাই করে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের তালিকা তৈরী করেছে। এখানে আমার করা কিছুই নেই। শিলখালী ইউনিয়ন সাম্প্রতিক বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হলেও তারা শিলখালীতে তালিকায় রাখেনি। তারা মূলত দুর্যোগ অধিদপ্তরের কাছ থেকে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা সংগ্রহ করে সে মোতাবেক ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় কৃষি উপকরণ বিতরণ করছে। তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থা তারা নিজেদের মতো করে সব কিছু করছে।

পাঠকের মতামত: